ইলেকট্রিক শক দেওয়ার মেশিন দেখতে চাওয়ায় সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খাবার খেতে গিয়ে মাদক কারবারিদের কাছে ট্রেজার গান (ইলেক্ট্রিক শক দেওয়ার মেশিন) দেখতে পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। সেই ট্রেজার গান দেখতে চাওয়া নিয়ে তাৎক্ষণিক ধস্তাধস্তিতে মাদক কারবারিদের সুইস গিয়ারের ছুরিকাঘাতে তিনি (সাম্য) নিহত হন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো.সাজ্জাত আলী। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তিনজনকে ঘটনার দিন রাতে এবং আট জনকে নতুন করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন’ সংক্রান্ত এক সংবাদ সন্মেলনে এসব বলেন তিনি। গ্রেপ্তার আট জন হলেন- রাব্বী, মেহেদী, পাভেল, রিপন, সোহাগ, রবিন, হৃদয়, সুজন সরদার। মো. সাজ্জাত বলেন, গত ১৩ মে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে খুন হন সাম্য। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাÐের ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। ঘটনার রাতেই জড়িত তিনজনকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তার তিন আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনাস্থলে সরাসরি উপস্থিত ও হত্যাকাÐে অংশগ্রহকারীতের শনাক্ত করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় ডিবির একাধিক দল ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে এই সংক্রান্ত আরও ৮জনকে গ্রেপ্তার করে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন ১৩ মে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে সাম্য এবং তার দুই বন্ধু একটি মোটরসাইকেলে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যায়। সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে মূলত মাদক ব্যবসার একটি চক্র আছে। মেহেদী সেই চক্রের মূল হোতা। তার গ্রæপের একজন রাব্বীর হাতে একটি ট্রেজার গান ছিল। সেই ট্রেজার গানটি দেখে সাম্য সেটি কি জানতে চায়। জানতে চাওয়ার একটি পর্যায়ে তাদের মধ্যে যখন ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীর অন্যান্য যারা আছে, তারা ঘটনাস্থলে আসে এবং ধস্তাধস্তির একটি পর্যায়ে এই হত্যাকাÐটি ঘটে। তিনি আরও বলেন, এই হত্যাকাÐে আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি, ওই মাদক কারবারিদের একজন সদস্য রাব্বী তাৎক্ষণিকভাবে সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনেক ফুডকোর্ট আছে। সেখানে অনেক রাত পর্যন্ত খাবার পাওয়া যায়। আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি, সাম্য এবং তার দুই সহপাঠী খাবারের জন্য সেখানে যায়। খাবারের জন্য গেলে ট্রেজার গানটি দেখে সাম্যের সন্দেহ হয়। জিনিসটা কি সেটি দেখার জন্য এবং সেটি নিতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি ঘটে। তিনি আরও বলেন, তদন্ত কার্যক্রম এখনো চলমান আছে। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে এই হত্যাকাÐ ঘটেছে বলে এখন পর্যন্ত আমরা পেয়েছি। এর নেপথ্যে আর কোনো ঘটনা আছে কি না, অন্য কোনো বিষয় আছে কি না সেটি নিবিড়ভাবে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক কারবারিদের তিনটি গ্রæপে ভাগ করা। একটি গ্রæপ তিন নেতার মাজারের পাশে, একটি মাঝখানে, একটি ছবির হাঁটে মাদক কারবার পরিচালনা করে। একটি গ্রæপের দায়িত্বে আছে মেহেদী। যে ৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে সবাই মেহেদীর গ্রæপের। সে ওই গ্রæপের দলনেতা। মেহেদী মূলত সুইস গিয়ারগুলো সাপ্লাই দিয়ে থাকেন। ঘটনার দিন একটি কাল ব্যাগে করে মেহেদী সুইস গিয়ারগুলো আনে এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাকিদের কাছে সরবরাহ করে। এই হত্যাকাÐটি পরিকল্পিত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ঘটনার মূল আসামি আমাদের রিমান্ডে এলে আমরা হত্যাকাÐের মূল মোটিভ বের করার চেষ্টা করবো। অস্ত্রের ব্যবহার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে মাদকের কারবার সেখানেই অস্ত্রের ব্যবহার আছে। এটা শুধুমাত্র বাংলাদেশে না, এটা বিশ্বব্যাপী। কারণ যেখানে মাদক সেবন বা মাদকের কারবার হয় সেখানে কাঁচা টাকার কারবার থাকে। তাই এসব স্থানে অস্ত্রের ব্যবহার হয়। গ্রেপ্তার মেহেদীর দেখানো স্থান থেকে মাটিচাপা দিয়ে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় হত্যাকাÐে ব্যবহৃত দুইটি সুইস গিয়ার চাকু উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এছাড়া গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে দুই জন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে বলেও জানান তিনি।